Posts

Showing posts from March, 2017

গীবত ও চোগলখুরী

“যদিও গীবত করা ভালো না, তারপরও একটা সত্য কথা বলি...”। এভাবেই আমরা গীবত শুরু করি। কারো এমন কথা যা তার সামনে বললে যদি সে কষ্ট পায় ওই একই কথা যদি তার অনুপস্থিতিতে আরেকজনের সামনে বললে তাকেই গীবত বলে যদিও কথাটি সত্য হোক না কেন। সত্য হলে গীবত আর বানিয়ে বললে হবে অপবাদ। যা গীবতের চেয়েও মারাত্মক। দেশে ইসলামি আইন থাকলে অপবাদ দেয়ার শাস্তি তাকে পেতে হত, আখিরাতেও তো আছেই। আবু হুরায়রা (রাদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ(ﷺ)বলেছেন, গীবত কাকে বলে, তোমরা জান কি? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই(ﷺ)ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোন ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তাই গীবত। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যে দোষের কথা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রসুলুল্লাহ(ﷺ)বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার গীবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ। (সহিহ মুসলিম) গীবতের পরিণামঃ  গীবত ইসলামি শারিয়াতে হারাম ও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বং

কুরবানীর গুরুত্বপূর্ণ ৭১ টি মাসআলা

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫ মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল উল্লেখ হল। ১. কার উপর কুরবানী ওয়াজিব, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। আর নিসা

মহেশ- 'দ্যা কাউ' (শরৎচন্দ্রের 'মহেশ' অবলম্বনে)

গ্রামের নাম কাশিপুর । এক বিতর্ক অনুষ্ঠান শেষ করিয়া তর্করত্ন দ্বিপ্রহর বেলায় রোদে পুড়িয়া বাড়ি ফিরিতে ছিলনে । বৈশাখ শেষ হইয়া আসে তবুও চারিপাশে ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’ অবস্থা’ । জলবায়ু পরিবর্তন আর বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে অনাবৃষ্টির আকাশ হইতে আগুন ঝরিতেছে । পথের ধারে গফুর মিয়ার বাড়ি । বাড়ি তো নয় যেন প্রাচীন প্রত্ন তাত্ত্বিক নির্দশন । পাশের পিটালি গাছের ছায়ায় দাঁড়াইয়া তর্করত্ন উচ্চকন্ঠে ডাক দিলেন ‘ওরে, ও গফরা বলি বাড়ি আছিস?’ হাঁক শুনিয়া গফুর অন্দরমহল হইতে বাহির হইয়া আসে । ভাঙ্গা প্রাচীরের পাশে বাবলা গাছের তলে একটা ষাঁড় দেখাইয়া তর্করত্ন কহিলেন, তুই তো বড় পাষণ্ডরে গফরা । একি হাল গরুটার । পাঁজরের হাড় স্পষ্ট গোনা যাচ্ছে । তুই ওকে ‘খড়লিক্স’ দিতে পারিস নে ? এতে যে ঘাসের শক্তি বাড়ে রে গফরা, আমার গরুকে আমি রোজ খাওয়াই । গফুর কি বলিবে খুজিয়া পায় না , শেষে গেঞ্জি খুলিয়া তাহার জিরো ফিগার দেখাইয়া বলিল ‘মহেশের হাড় তো দেখিলেন বাবাঠাকুর, এইবার আমারটাও একটু দেখুন। ২০৬ খানা হাড় স্পষ্ট গুনিতে পারিবেন । গুনিলে হয়ত দুতিন খানা কমও পাইতে পারেন ।’ এমন লিকলিকে শরীর দেখিয়া তর্করত্ন দুঃখিত হওয়ার বদলে খিকখিক ক

একজন তালগাছবাগীর সাথে কিছু আলাপ

-       আমি একজন নাস্তিক। আমার নাস্তিকতার কারণ অনেকগুলো প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি। মোল্লা-মুন্সি থেকে সবাইকে জিজ্ঞাসা করেছি। কেউই উত্তর দিতে পারেনি। আপনারা দাবি করেন আল্লাহ ন্যায় বিচারক। কিন্তু আমি আবিষ্কার করেছি তিনি (যদি আসলেই থেকে থাকেন) সবচেয়ে বড় অবিচারক। ‘আল্লাহ ন্যায় বিচারক’ এর প্রমাণ কী? -       আপনাকে তো আমার মানুষ মনে হচ্ছে না, কুত্তার বাচ্চা মনে হচ্ছে। -       ওকে থ্যাংক্স, আমার উত্তর পেয়ে গেছি... -       কী উত্তর পেলেন? -       আমাকে গালি দেওয়ার কারনটা জানতে পারি? আমি নাস্তিক এ জন্যই? আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন ভালো কথা, গালি দেবেন কেন? ১. খেয়াল করুন, আমি কিন্তু আপনাকে সরাসরি কুত্তার বাচ্চা বলিনি, প্রথমে বলেছি “মানুষ মনে হচ্ছে না”। কথাটা আপনার প্রশ্নটার উত্তরে বলা। বাস্তবতা আর মানুষের ধারণার মধ্যে অনেক তফাত আছে এটা বোঝানোর জন্য বলা। মানুষ অত্যন্ত সীমিত ক্ষমতার মানুষ। সে খুব অল্প জিনিস থেকেই অন্যের ব্যাপারে একটা ধারণাতে চলে আসে। চলে যে আসে তার উদাহরণ দিয়েছিলাম আপনাকে, আপনি তলিয়ে চিন্তা করলে ধরতে পারতেন। শোনেন ভাই, আমি আপনাকে মানুষ মনে করি আর না ক

অ্যাডাম টিজিং

পরম করুণাময়-দয়াশীল আল্লাহ’র নামে শুরু করছি ছোটবেলায় “না-মানুষী বিশ্বকোষ” নামে একটা বই আমার খুব প্রিয় ছিল - প্রাণী জগতের মজার মজার সব তথ্য আর ছবিতে ঠাসা। সে বইয়ের একটা ছবি আমার এখনো চোখে ভাসে - এক অজগর একটা বিশাল বন বরাহকে মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছে, আস্ত। সাপ যাই খায় সেটার মাথা আগে গিলে, তারপর শরীরের আর বাকি অংশ। এখন অজগরটা গেলার সময় বুঝতে পারেনি শুকরটা এত বড়। কিছুটা গেলার পর সে এখন আর বাকি অংশটা গিলতেও পারছেনা, বেরও করতে পারছেনা - এসব ক্ষেত্রে বেশিভাগ সময় অজগরটা মারা যায়। যদি অনেক কষ্টে-সৃষ্টে সে শিকারটা গিলে ফেলতেও পারে তবুও অজগরটা খুবই অসহায় হয়ে যায়। মানুষ তাকে পিটিয়ে মারে বা অন্যান্য বড় পশু তাকে আঁচড়ে-কামড়ে শেষ করে ফেলে - সে গলায় খাবার নিয়ে অসহায় ভাবে দেখে, রা-টি কাড়তে পারেনা। আজকাল খবরের কাগজ দেখলে এদেশকে আমার ঐ সাপের মতই লাগে। পশ্চিমা সভ্যতার শুকরটাকে আমরা হাভাতের মত মুখে ঢুকিয়েছি, গিলতে পারিনি। লাঠির বাড়ি আর হায়েনার নখের আঘাতে আমরা গোঁ-গোঁ করছি, শত্রুদের তাড়িয়ে দেয়া তো দূরে থাক চিৎকারও করতে পারছিনা। মানুষ একটা যুক্তিবাদী প্রাণী। সে তার বিবেক-বোধ যৌক্তিকতার সাথে ব্যবহার করে পশুত্বক

সমালোচনা

বিসমিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি ‘আলা রাসূলিহিল কারীম।ফেইসবুকের অধিকাংশ পোস্টই এখন সমালোচনা/ পালটা সমালোচনা মূলক। কোনো কিছু আমাদের মনমতো না হলেই আমরা সমালোচনা করি। সেই সমালোচনা মনমতো না হলে আমরা আবার পালটা সমালোচনা করি। কিন্তু সমালোচনার এই বিনিময়ের ফলে যে ইতিবাচক ফলাফল আসার কথা সেটা আসছে না। ফলে, দিনশেষে সমালোচকদের সম্বল তিক্ততা আর পাঠককুলের অর্জন সংশয় আর হতাশা। তাহলে কি আমরা সমালোচনা করা ছেড়ে দিব? অবশ্যই না। গঠনমূলক সমালোচনা সামষ্টিকভাবে আমাদের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন। আর মু’মিন তো মু’মিনের আয়নাস্বরূপ, সেই আয়নায় পর্দা দিলে কীভাবে হবে? তাই সমালোচনা ও সমালোচনা গ্রহণ কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে আমার নিজস্ব কিছু মতামত তুলে ধরছি এবং এক্ষেত্রেও সবার কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা আশা করছি। সমালোচনা মূলত একটা প্রতিক্রিয়াসুলভ ব্যাপার। কোনো ঘটনা বা বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা সমালোচনা করতে উদ্যোগী হই। কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেখানো আর সমালোচনা করার মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে। প্রতিক্রিয়া দেখানোর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করা যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গায়ের জ্বালা জুড়ানোর জন্য করা হয়ে

জাতীয়তাবাদ ও ইসলাম

একটা রিকশাওয়ালাকে আপনি যুক্তি দিয়ে কোন কথা বোঝালে সে অনেক সহজেই তাতে সায় দেবে। মাথা নেড়ে বলবে "হ, আপনি ঠিকই কইছেন।" কিন্তু একটা শিক্ষিত ডিগ্রিওয়ালা লোককে আপনি তার চেয়ে শক্তিশালী যুক্তি দেখালেও তার মেনে নিতে অনেক কষ্ট হবে, যদি সেটা তার মতের বিরুদ্ধে যায়। কেন? এর কারণ রিকশাওয়ালাটি স্বল্পশিক্ষিত হওয়ায় তার মাথা ফিলোসফি আর নানা তত্ত্বকথার বাহুল্যে পরিপূর্ণ হয়ে যায়নি। নতুন আগত বিষয়কে সে খুব সহজেই মাথায় বসাতে পারে। কিন্তু সেক্যুলার শিক্ষিত লোকটি তার সারাজীবনের ধ্যানধারনা, আদর্শ আর থিওরি দিয়ে মগজটা ভরিয়ে রেখেছেন, নতুন কোন থিওরি বা যুক্তিকে জায়গা দেওয়াটা তার মস্তিষ্কের পক্ষে কঠিন। আরবের সাধারন লোকগুলো ইসলামের বেসিক প্রিন্সিপাল যত সহজে আয়ত্ত করেছিল আজকের শিক্ষিত সমাজ তত সহজে তা গ্রহণ করতে পারে না। এর মূলেও একই ব্যাপার। তাওহীদের বাণীটা খুবই সহজ-সরল। কিন্তু এই সহজ সরল বাণীটা ধারন করতে হলে বাকি সব কঠিন কঠিন আদর্শ, ফিলোসফিকে বিসর্জন দিতে হয়। এক আল্লাহ্‌র দাসত্ব মেনে নিলে অন্য সব তত্ত্ব আর প্রবৃত্তির দাসত্ব ছুঁড়ে ফেলতে হয়। একটা অসুস্থ মানুষের কাছে মুখরোচক খাবার ভালো লাগে না। সেটাকে ভাল