ভুলে গেলে অামায়, হুজুর হয়ে

ঘুম থেকে উঠেই ঝাড়ু দেখে বিরক্তবোধ করলো হিমু। এই সাতসকালে ঝাড়ু দেখতে কার ভাল্লাগে?
.
হঠাৎ ঝাড়ুটা নড়ে উঠে বললো, "হিমু সাহেব, আপনার কি ঘুম পুরেছে?" হিমু বললো, "ফজরের পর ঘুমানোর অভ্যাসটা খারাপ জেনেও ছাড়তে পারছি না, ঝাড়ু ভাইয়া। প্লিজ মারবেন না।"
.
ঝাড়ুটা এবার রেগে গিয়ে বললো, "ঝাড়ু ভাইয়া মানে? অ্যাই রাতে কী খেয়েছিস তুই?" হিমু চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলো। দেখলো ঝাড়ুটা আসলে বড় চাচার গোঁফ। বড় চাচার কথাকেই সে ঘুমের ঘোরে ঝাড়ু ভাবছিলো।
.
"আজওয়া খেজুর খেয়েছিলাম, বড় চাচা। আমার এক বন্ধুর বাবা হজ থেকে ফেরার সময় নিয়ে এসেছেন।" বড় চাচা বললেন, "কয়টা খেয়েছিস?" হিমুর জবাব, "মনে পড়ছে না। তবে অনেকগুলো হবে। একশ আটটাও হতে পারে। চাচা, তুমি আমাকে নিয়ে একটা বই লিখতে পারো। নাম হবে 'হিমুর মুখে একশ আটটি আজওয়া খেজুর।"
.
বড় চাচা বললেন, "মশকরা রাখো। এখন বলো মুখে এসব জঙ্গল বানিয়েছো কেন?" হিমু বললো, "অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের জন্য বন জঙ্গলের অনেক গুরুত্ব, বড় চাচা। বিশেষ করে রামপাল-সীতাপালের এই যুগে।"
.
বড় চাচার রাগ সীমা ছাড়া পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে বললেন, "আগে তো দাড়ির একটা সাইজ ছিলো। এখন এক মুষ্টি জঙ্গল বানিয়েছো। গাল চুলকায় না? আমার তো দেখেই চুলকাচ্ছে।" হিমু বললো, "না চাচা, চুলকায় না। তোমার চুলকানিটা আমাকে দিয়ে দাও। শেয়ার ইট আছে না? অন কর।"
.
বড় চাচা উঠে গটমট করে চলে গেলেন। তাঁর গোঁফের কারণে নাকের নিচে চুলকায় কিনা সেটা আর জানা হলো না হিমুর।
.
.
"ঘুমের ঔষধ।" বললো নিতু।
.
হিমু উঠে গিয়ে দুটো ট্যাবলেট এনে দিলো। নিতু কান্না চেপে বললো, "আপনি জানেন না আমার ৭০টা ট্যাবলেট লাগে?"
.
ঘটনাটা হিমুর মুখস্থ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন এসে আত্মহত্যার কথা বলে ৭০টা ঘুমের ট্যাবলেট চায় নিতু। হিমু দুটো দিয়ে বলে "প্রেসক্রিপশন ছাড়া এর বেশি দেওয়া যাবে না।" সাধারণত এটা বলার পর নিতু ঔষধ না নিয়েই চলে যায়। আজ যাচ্ছে না। দাঁড়িয়েই আছে। হিমু বুঝতে পারছে না কী বলা উচিত।
.
হিমু বললো, "নিতু, গরম পানি খাবে? ফার্মেসির ভেতর হিটার আছে। পানি গরম করে দিতে পারবো। বাসায় গিয়ে একটু চিনি আর লিকার খেয়ে নিয়ো।"
.
নিতু বললো, "এই যে আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার সাথে ফাজলামো করছো, এটা কি ইসলাম সমর্থন করে? খালি চোখের পর্দা করলেই হবে?" হিমু বললো, "স্যরি নিতু। নতুন নতুন হুজুর হয়েছি তো। সবকিছু মনে থাকে না।"
.
নিতু আবার বললো, "হুজুর না হয় হলে। কিন্তু হলুদ পাঞ্জাবিটা ছেড়ে সাদা, সবুজ এসব পরা শুরু করলে কেন? কেন তুমি এত বদলে গেলে?" হিমু বললো, "আব্দুল্লাহ ইবনে আমর, আলী ইবনে তালিব প্রমুখ সাহাবি থেকে কয়েকটা হাদীস এসেছে সহীহ মুসলিমে। সেখানে হলুদ কাপড় পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সাদা কাপড়ের ব্যাপারে অনেক হাদীসেই উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।"
.
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই নিতু উল্টো ঘুরে হাঁটা দিয়েছে। হিমু আবার আকাশের দিকে ফিরলো। ঘনিয়ে আসছে আঁধার। মাগরিবের আজান দেবে একটু পরই। সোমবার উপলক্ষে রোজা রেখেছে হিমু।
.
আজ কী দুআ করা যায় ভাবছে হিমু। নিতু যাতে দ্বীনদার হয়ে যায় সেই দুআ করবে? নিতু বলে হুজুর হয়ে তাকে ভুলে গেছে হিমু। আচ্ছা নিতু দ্বীনদার হয়ে গেলে হিমুর কী? সে কি মনে মনে তাকে বিয়ে করতে চাইছে?

source: https://www.facebook.com/Hujur.Hoye/posts/582114235314963

Comments

Popular posts from this blog

The Superstar Of Hell

অ্যাডাম টিজিং

PHP তে HTML Escape করা