মাহরাম

এক 

"ভাইয়া" "আপু" "আপুনি" "আপি" "বইনডি" "আপনি থেকে তুমি- তুমি থেকে তুই" যত আপনবোধক শব্দে শব্দায়িত করে আলাপচারিতা চালানো হোক না কেন,"Innocent" মন থাকুক না কেন নন- মাহরাম is নন-মাহরাম! দুইজনের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি শয়তান থাকবেই! হিজাবের কথা আসলেই আমাদের চোখের সামনে ভাসে কালো বোরখা!

আমরা মনে করি হিজাব মানে এক টুকরো কাপড়! কিন্তু আমরা ভুলে যাই কাপড় হিজাবের একটা অংশ মাত্র। হিজাবের সাথে আছে অবনত দৃষ্টি, লজ্জাস্থানের হেফাজত, নিজেদের সৌন্দর্যের হেফাজত।

হিজাবের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মাহরাম -নন মাহরাম যেটা আমরা বেশীর ভাগই ইগনোর করি বা জানিনা বা জেনেও না জানার ভান করি !

কিছু মনে করবেন না প্লিজ হিজাবের এই গুরুত্বপূর্ণ মাহরাম- নন মাহরাম ইস্যুতে আমাদের বোনগুলো অনেকটাই পিছিয়ে আছে। তারা হয় বিষয়টা বুঝতে পারেনা কিংবা জানেনা কিংবা এটার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেনা! আমরা সবাই নিশ্চয় সূরা নূরের ৩০আর ৩১ আয়াত দুইটার কথা জানি। ৩০ নং আয়াতে এসেছে পুরুষের পর্দা আর সংযমের কথা আর ৩১ নং আয়াতে নারীদের। একটা বিষয় খুব ভাল করে খেয়াল করলে দেখবেন ৩০ নং আয়াতে কোন মাহরামের কথা বলা না হলেও আল্লাহ তায়ালা ৩১ নং আয়াতে নারীদেরকে তাদের মাহরাম কারা তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। একেবারে জন জন করে। দেখুন...

"...তারা যেন তাদের স্বামী, তাদের পিতা, তাদের শ্বশুর, তাদের ছেলে, তাদের স্বামীর (আগের ঘরের) ছেলে, তাদের ভাই, তাদের ভাইর ছেলে, তাদেরবোনের ছেলে, তাদের (সচরাচর মেলা মেশার) মহিলা, নিজেদের অধিকারভুক্ত সেবিকা দাসি, নিজেদের অধীনস্থ (এমন) পুরুষ যাদের (মহিলাদের কাছ থেকে) কোন কিছুই কামনা করার নেই, কিংবা এমন শিশু যারা এখনো মহিলাদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কেকিছুই জানেনা- (এমন মানুষ ছাড়া তারা যেন) অন্য কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ নাকরে..."
(সূরা নুরঃ ৩১)

আমাদের দ্বিনী ভাই বোনদের তাই এই কথাটা বলতে চাই যে ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য পর্দার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ মাহরাম ব্যতীত অন্য কোন ননমাহরামের সাথে মেলামেশা না করা। সেটা যেখানেই হোক হতে পারে তা ফেসবুকে, চ্যাটে কিংবা অন্য কোথাও। আপনারা যেভাবেই বিষয়টা সহজ করতে চান না কেন মনে রাখবেন এটা কুরানে আল্লাহর আদেশ। আর দুইজনের মাঝে শয়তান তো ঘাপটি মেরে থাকবেই। মনে রাখবেন শয়তান মুমিন ভাইদের কাছে হিজাব পরে আর মুমিনা বোনদের কাছে দাড়ি টুপির মুমিন হয়েই আসে।

আমি জানিনা এটা কাদের বলছি কিংবা কেন বলছি। এই বিষয়টা কাউকে যুক্তি তর্ক, দলিল দিয়ে বোঝানোর চাইতে এটা অনেক বেশী ব্যক্তির নিজেরআত্মশুদ্ধির ব্যাপার, আত্ম উপলন্ধি, নিজের আত্মরক্ষার ব্যাপার। প্রতিদিন ইসলামের কয়েকটা পোস্ট মেরে ফেসবুকে হোক যেখানেই হোক দ্বীনদার হওয়ার সুযোগ কারোরই নেই। আমারও না আপনারদেরও না। তাই "দীনী লেভেলে" হিজাবের এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটা ভুলে মাখামাখি করার আগে আল্লাহর কুরানের আয়াত মনে রাখবেন। আল্লাহকে ভয় করবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন... আমীন।

দুই 

ভার্সিটিতে কি ফেসবুকে – ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব এখন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এখানে কেউ কাউকে বানায় পাতানো বোন, কেউ বলে আম্মা, অনেকে আবার খুব আত্মবিশ্বাসী হয়ে বলে, 'আমাদের বন্ধুত্বে কোনও খাদ নাই, We are just friends!' ধর্মের দোহাই দিয়েও অনেকে চ্যাট বা কমেন্টে মেতে উঠেন।

কিন্তু এই সকল আপনি – তুমি – তুই ডাক আর নানান সম্বোধনের আড়ালে অনেকেই আসল ব্যাপারটা ধরতে পারে না যে, পরিচিত হই না হই, নন মাহরাম কিন্তু নন মাহরামই! আলাপচারিতায় বা ‘বন্ধুত্বে’ যতই আপন ভাব আসুক না কেন – শয়তান উপস্থিত হবেই এবং গুনাহ এর পথে টেনে নিয়ে যাবে।

এই ধারণাটা আমাদের অন্তরে আসে না কারণ গায়রে মাহরাম কারা, সেটার সংজ্ঞা অনেকের জানা নাই।

মাহরাম শব্দের শাব্দিক অর্থ: হারাম, যা হালাল এর বিপরীত। অর্থাৎ যাদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম। কোরআনে কারা মাহরাম সেটা স্পষ্ট বলা আছে:

“তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে মিলিত হয়েছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে।...”
( সূরা নিসা : ২৩ নং আয়াত)

"ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, ... তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, কামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”
(সূরা নুর : ৩১ নং আয়াত)

অর্থাৎ এই ১৪ জন ছাড়া সকলেই - যেমন বন্ধু বান্ধব, কাজিন, দুলাভাই, দেবর, দূর সম্পর্কের মামা, চাচারা – বেগানা এবং তাদের সাথে পর্দা করা লাগবে। এমনকি যারা বিয়েবাড়ির ওয়েটার, মাছ-সব্জি বিক্রেতা, ঘরের কাজের মানুষদের ধর্তব্যের মধ্যে ধরেন না, তাদেরও এই ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

মনে রাখা খুব দরকার, হিজাব বা পর্দা মানে শুধু পোশাক নয় – পোশাক তো হিজাবের অংশ মাত্র। তাই সবারই এর গুরুত্ব অনুধাবন করা উচিত।

তিন 

"গাইর-মাহরাম নারীদের সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ যেকোন উঠতি বয়সের ছেলে থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার কাছেই কমবেশি আকর্ষণীয় লাগেই, লাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু আল্লাহ তা অপছন্দ করেন। এমন মেলামেশা ও সম্পর্কগুলো হারাম। 'মিক্সড গ্যাদারিং' এড়িয়ে যেতে পারা মনে হয় তেমন সহজ নয়, যখন এখনকার সমাজে সবাই যখন 'স্মার্ট'। এখন প্রায় বন্ধুদের সার্কেলে ছেলেমেয়ে মেলামেশা থাকে, পরিবারে 'কাজিন'দের মাঝেও তা দেখা যায়।

'কাজিন' কখনই আপন ভাই বোন নয়, এবং আমার শোনা অনেক বাস্তব ঘটনাতে আমি এই কাজিনদের সাথে দুনিয়ার জীবনের জটিলতা সৃষ্টিকারী ও আখিরাত ধ্বংসকারী ভয়াবহ ঘটনার আলাপ শুনেছি। সাবধান থাকা আবশ্যক।"

চার

সম্প্রতি মার্কিন গাইনী ও অবস বিশেষজ্ঞ ডা. ইউএস অরিভিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। নিজের ইসলাম গ্রহণ প্রসঙ্গে ডা. অরিভিয়া বলেন, আমি আমেরিকার একটি হাসপাতালে গাইনী ও অবস বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করি।

একদিন হাসপাতালে এক আরব মুসলিম নারী এলেন বাচ্চা প্রসবের জন্য। প্রসবের পূর্বমুহূর্তে তিনি ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। প্রসব মুহূর্ত ঘনিয়ে এলে তাকে জানালাম, আমি বাসায় যাচ্ছি, আর আপনার বাচ্চা প্রসবের দায়িত্ব অর্পণ করে যাচ্ছি অন্য এক ডাক্তারের হাতে। মহিলা হঠাত্ কাঁদতে লাগলেন, দ্বিধা ও শঙ্কায় চিত্কার জুড়ে দিলেন, ‘না না, আমি কোনো পুরুষ ডাক্তারের সাহায্য চাই না।

আমি তার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। এ অবস্থায় তার স্বামী আমাকে জানালেন, সে চাইছে তার কাছে যেন কোনো পুরুষের আগমন না ঘটে। কারণ সে সাবালক হওয়া থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত তার আপন বাপ, ভাই ও মামা প্রভৃতি মাহরাম পুরুষ ছাড়া অন্য কেউ তার চেহারা দেখেনি। আমি হেসে উঠলাম, তারপর চরম বিস্ময় নিয়ে তাকে বললাম, অথচ আমি কিনা এমন এক নারী আমেরিকান এমন কোনো পুরুষ নেই, যা তার চেহারা দেখিনি। অতঃপর আমি তার আবেদনে সাড়া দিলাম।

বাচ্চা প্রসবের পরদিন আমি তাকে সাহস ও সান্ত্বনা দিতে এলাম। পাশে বসে তাকে জানালাম, প্রসব-উত্তর সময়ে দাম্পত্যমিলন অব্যাহত রাখার দরুন আমেরিকায় অনেক মহিলা অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ এবং সন্তান প্রসবঘটিত জ্বরে ভোগেন। অতএব আপনি এ সম্পর্ক স্থাপন থেকে কমপক্ষে ৪০ দিন বিরত রাখবেন। এ ৪০ দিন পুষ্টকর খাদ্য গ্রহণ ও শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকার গুরুত্ব ও তুলে ধরলাম তার সামনে। এটা করলাম আমি সর্বশেষ ডাক্তারি গবেষণার ফলাফলের নিরিখে।

অথচ আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে তিনি জানালেন, ইসলাম এ কথা বলে দিয়েছে। প্রসব-উত্তর ৪০দিন পবিত্র হওয়া অবধি ইসলাম স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ করেছে। তেমনি এ সময় তাকে নামাজ ও রোজা থেকেও অব্যাহতি দিয়েছে।

এ কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। বিস্ময়ে বিমূঢ় হলাম। তাহলে আমাদের এত গবেষণা আর এত পরিশ্রমের পর কেবল আমরা ইসলামের শিক্ষা পর্যন্ত পৌঁঁছলাম! আরেকদিন এক শিশু বিশেষজ্ঞ এলেন নবজাতককে দেখতে। তিনি শিশুর মায়ের উদ্দেশে বললেন, বাচ্চাকে যদি ডান কাতে শোয়ান তবে তা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে করে তার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে।

শিশুর বাবা তখন বলে উঠলেন, আমরা সবাই সর্বদাই ডান পাশ হয়ে ঘুমাই। এটা আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। এ কথাশুনে আমি বিস্ময়ে থ হয়ে গেলাম! এই জ্ঞান লাভ করতে আমাদের জীবনটাই পার করলাম আর সে কি-না তার ধর্ম থেকেই এ শিক্ষা পেয়ে এসেছে!
ফলে আমি এ ধর্ম সম্পর্কে জানার সিদ্ধান্ত নিলাম। ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনার জন্য আমি এক মাসের ছুটি নিলাম এবং আমেরিকার অন্য শহরে চলে গেলাম, যেখানে একটি ইসলামিক সেন্টার আছে। সেখানে আমি অধিকাংশ সময় নানা জিজ্ঞাসা আর প্রশ্নোত্তরের মধ্যে কাটালাম। আরব ও আমেরিকার অনেক মুসলমানের সঙ্গে ওঠাবসা করলাম। আলহামদুলিল্লাহ এর কয়েক মাসের মাথায় আমি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিলাম।

 পাচ

প্রেমিক (লম্পট অথবা আজকাল কার ভাষায় আধুনিক মুক্তমনা স্মার্ট) parkএ অথবা অন্য কোথাও, অথবা যারা নিষ্পাপ 'Friendship'এর অজুহাতে CO-EDUCATION এ পড়াশুনা করার সময় ছেলে মেয়েরা হাত ধরা ধরি করে বসে থাকেন তাদের উদ্দেশ্যে একটি হাদিছ: রাসুল(সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

''তোমাদের কারো মাথায় যদি লোহার সুঁচ দিয়ে আঘাত করা হয় তবে সেই আঘাত এর যন্ত্রণা তার জন্য উত্তম এমন কোনো মহিলা কে স্পর্শ করা থেকে যাকে স্পর্শ করা তার জন্য জায়েজ নেই। (অর্থাৎ গায়ের মাহরাম মহিলা)।''(হাদিছ টি সহিহ,তাবারানী #২০ /২১২,সহীহ আল-জামী # 4921)
"কোন গাইর-মাহরাম নারীর সাথে কখনো একাকী অবস্থান করবেন না, আপনি যদি তাকে কেবল কুরআন শেখাতেও যান, তবুও না।"
--- উমার বিন আবদুল আজিজ (আস-শাম, পৃষ্ঠা ১৩৯)

ছয়

একজন সত্যিকারের "আসল পুরুষ" নন-মাহরাম নারী দেখলেই চোখ নামিয়ে ফেলে। এটাই প্রকৃত পুরুষত্ব। কারণ আল্লাহ্‌ "পুরুষ" কে ডিফাইন করেছেন কুরআনে। এবং সেখানেই পুরুষদের একটা একটা বৈশিষ্ট্য বলেছেন যে তারা নন-মাহরাম দেখলে চোখ নামিয়ে ফেলবে। ১৩ ইঞ্চি বাইসেপস বানিয়ে, সিক্স প্যাক এবস নিয়ে বেগানা নারীর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলে সেটা পৌরুষ নয়। সেটাকে লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজে লুইচ্চা বলে।

সাত

ফেসবুকে নন-মাহরাম মেয়েদের প্রোফাইল ঘুরে ঘুরে তাদের ছবি দেখাও কিন্তু বাস্তব জগতে হা করে তাকিয়ে থাকার মতই অননুমোদিত, নিষেধ। খেয়াল করুন ভাইয়েরা, চক্ষু সংযত করুন। মন ও চোখকে পরিচ্ছন্ন রাখুন। আগুণ থেকে দূরে সরে আসুন।

আট

গায়েরে মাহরাম ছেলেদের কাছে যে মেয়েদের পড়াতে একাকী পাঠানো হয়, এটার বিধান কি ইসলাম দেয়? না দেয় না। (এটাই ওই ইভটিজিং এর শিকার দৃশ্যত হিজাবী মেয়ের পর্দার লঙ্ঘন।) মূলত তার বাপ, ভাই তথা মাহরাম পুরুষরাই তার পর্দা লঙ্ঘন করেছে, করিয়েছে। এরা মূলত পর্দার বিধান সম্পর্কে স্পষ্ট জানে না। এমনকি মডারেট মুসলিমদের অনেককেই দেখেছি যে কাপড়ের পর্দাটুকু জানলেও এর বাইরে যে যে আরো কতগুলো বিধান আছে তা সম্পর্কে অসচেতন।

পরিমল আর পান্নাদের কাছে আপাদমস্তক পর্দা করা মেয়েকে একাকী পড়তে পাঠালে আপনি কি মনে করেন যে আপনি আল্লাহর বিধান হিজাব পালন করছেন? কখনোই না। ওই মেয়ে আর মেয়ের অভিভাবক কেউই আল্লাহ বিধান হিজাব পালন করছে না। করলে কিভাবে সে ননমাহরাম পুরুষের কাছে আল্লাহর সুন্দরতম সৃষ্টিগুলোর মধ্যে একটি, অর্থাৎ নারীকে পাঠাতে পারে কোন মাহরাম পুরুষ ছাড়া?? ওই মেয়ের বাপ-ভাইকে কি আল্লাহ ঘরে চুড়ি পরে বসে থাকার জন্য পাঠিয়ে ছিলেন? তাদের আল্লাহ চরমভাবে এই দুনিয়াতেই লাঞ্ছিত করেছেন। যারা আল্লাহর বিধান পর্দা সম্পর্কে অসচেতন আর দুইটুকরা কাপড় গায়ে পেঁচিয়ে যারা মনে করে যে আমি বা আমার মেয়ে তো পর্দা করছেই, আর দুনিয়ার লোভে মেয়েদের ননমাহরাম পুরুষদের কাছে পাঠায়, জ্ঞান অর্জনের নাম করে, অর্থ উপার্জনের নাম করে, আল্লাহ তাদের প্রতিদান দুনিয়াতেই দেন চরমভাবে লাঞ্ছিত করে।

ওই সব প্রগতিশীল বোনদের বলছি, আপনারা কি মনে করেন যে আল্লাহ আপনাদের নিরাপত্তা দিবেন যেখানে আপনারা আল্লাহর বিধানকে অবজ্ঞা করেন, আর যদি নাই করেন তাহলে আপনারা অন্তত বিধান জানতেন অথবা এর সম্পর্কে স্পষ্ট জানার চেষ্টা করতেন !

পর্দা কি শুধু আপাদমস্তক কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা? না সেটা সহ এমন কোন স্থানে একাকী না যাওয়া যেখান নন-মাহরাম আছে, যারা আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করতে পারে। আর প্রত্যকটা নারীর মাহরাম পুরুষরাও তার বিধানের অংশ। নন-মাহরাম নারী দেখলে চোখ নামিয়ে নেয়াই শুধু নয় বরং নিজেদের মাহরাম নারীদের নিরাপত্তা দেয়াও পুরুষদের হিজাবের অংশ। আপনার বোনের, আপনার মেয়ের কি হল, সেই খবর যদি পুরুষ না রাখে, তাদের নিরাপত্তা দিতে অসচেতন থাকে তবে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুনের সুসংবাদ। অর্থাৎ হিজাব পর্দার বিধান সমগ্র মানবজাতির নর-নারীভেদে সকলের উপর বিভিন্ন বৈচিত্রতা নিয়ে বর্তায়।

নয়

স্বামীর ভাই (অর্থাৎ দেবর) কিংবা অনান্য ভাই জাতীয় পুরুষ, যেমন কাজিন, তারা স্পষ্ট গায়ের মাহরাম।

আমাদের সমাজে অনেক স্বামী দেখা যায়, যারা তাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে উদাসীন। তারা নিজেরা প্র্যাক্টিসিং মুসলিম, স্ত্রীও নামায কালাম পড়ছেন, কিন্তু তিনি গায়ের মাহরামদের সাথে হাসি ঠাট্টা করছেন, কথা বলছেন, আওরাহ না ঢেকে সামনে আসছেন, গল্প করছেন। স্পষ্টতই এইসব গর্হিত কাজ ও চোখ, কান, জিহ্বার জিনা। অথচ স্বামী তার স্ত্রীকে এইসব জিনা আর গুনাহ থেকে বিরত রাখছেন না, বরং কোনক্ষেত্রে উৎসাহ দিচ্ছেন। সুবহান আল্লাহ!

এমন অনেক ভাই আছেন, যারা আলমদুলিল্লাহ দ্বীন পালন করছেন। তাদের স্ত্রীও দ্বীনি। কিন্তু উল্লিখিত পাপ করার ক্ষেত্রে স্ত্রীকে বাধা না দেয়ার কারণে অনেক ভাই দ্বীন পালন করেও জান্নাত থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।

 আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক ভাবে দ্বীন পালনের তাওফীক দান করুন।

দশ

পরপুরুষকে ভাই, বেগানা নারীকে বোন বানানোর ভয়ংকর সংস্কৃতি-
হারামকে লাইসেন্স দেয়ার জন্য মানুষের বাচ্চার মাথায় চালাকির অন্ত নেই! আল্লাহ বললেন, বেগানা নারী ও পরপুরুষের থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু মানুষ শয়তানের থেকে (কু)বুদ্ধি নিয়ে বেগানা নারীকে বানায় "বোন", পরপুরুষকে বানায় "ভাই"। স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটির সেই ঐতিহ্যের কথা নিশ্চয়ই সবার জানা আছে! "অমুক তো আমার ছেলে লাগে", "তমুক আমার মেয়ে হয়"। বাবা, দাদা, মা, নানী আরও কতপদের ডাক শুনলাম, ডেকে কি করা হয় তাও দেখলাম! এও হয়েছে বাবা ডাকা ছেলের সাথেই শেষমেষ প্রেম করে বিয়ে। তাই বলি কি, এইসব ডাকে সম্মান নেই, ক্ষুধার্ত নোংরা মনের লোভাতুর হাতছানি আছে মাত্র। শব্দের আড়ালে সেই লোভকে ধামাচাপা দিলেই মনটা পরিষ্কার হয়ে যায় না।

এগার

এই যে আপু, যখন বাইরে বের হচ্ছেন, নন মাহরাম মানুষের সামনে যাচ্ছেন, আপনার জন্য পর্দা রক্ষা করা ফরয। আপনি তা করছেন না। কেন? কারণ আপনার করতে ইচ্ছা করে না, কষ্টদায়ক বলে মনে হয়। তার মানে আপনি নিজের প্রবৃত্তিকে আল্লাহ্‌র ইচ্ছার উপর প্রাধান্য দিলেন। তাহলে কী দাঁড়াল? আপনি আল্লাহ নয় বরং প্রবৃত্তির দাসত্ব করলেন।

আবার হয়তো আপনি মাথায় কাপড় দিতে চান কিন্তু অফিসের বস বলে দিলেন অফিসের নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে 'মডার্ন' হতে হবে, মাথায় কাপড় দেওয়া চলবে না, ওড়না দুদিকে পরা যাবে না, একদিকে পরতে হবে। আপনি চাকরি টিকিয়ে রাখতে সেটাই মেনে নিলেন। তাহলে কী দাঁড়াল? আপনি আল্লাহকে নয় বরং আপনার বসকে প্রভু মানলেন !
পুরূষদেরকে খেয়াল রাখতে হবে...

"কারো ঘরে ঢুকার জন্য অনুমতি নেবার চর্চাটা খুব কম জায়গাতেই দেখেছি। এমনকি মা কিংবা বোনের ঘরে ঢুকার জন্য অনুমতি নিতে হয়। এসব আদব কায়দা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। অন্যদিকে হাবিজাবি সব স্বাধীনতার কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। সবাইকে অনুরোধ করবো যে কারো ঘরেই অনুমতি নিয়ে ঢুকার (এমনকি মা, বোনদের ঘরে) এই চর্চাটা শুরু করতে, দেখবেন মা বোনসহ পরিবারের সবার পর্দা রক্ষা করতে এটা অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।"

বার

নারী সংক্রান্ত যেকোন আলোচনায় অবধারিতভাবে যে কথাটি উঠে আসবে তা হল-“অমুক অমুক বিধান মেনেও তো মেয়েরা তমুক তমুক সমস্যায় পড়ে”। এটা হল শয়তানের শয়তানি, চালবাজের চালবাজি আর ইসলামকে ফিশিং গেম জ্ঞান করে চুজ এন্ড পিকের ফল।

আগেও বলেছি, ইসলামের বিধানগুলো একটা অন্যটার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটাকে বাদ দিয়ে আরেকটা মানলে সমস্যা থেকেই যাবে। মাহরাম ছাড়া নারীরা সফর করবে না এটাই আদেশ, তাই বলে মাহরামকে নিয়ে যেখানে খুশি যাব আর সমস্যায় পড়ব না, তা না। কোনখানে যাওয়া যাবে আর কোনখানে যাওয়া যাবে না সেই ব্যাপারেও ইসলামের কিছু বলার আছে। টিএসসিতে নিগৃহীত হওয়া নারীর সাথে তার স্বামী ছিল, এই তথ্য মাহরাম থাকার প্রয়োজনীয়তা কমায় না। যে মাহরাম আপনাকে নিয়ে বখাটেদের ভিড়ে গমন করায়, সে আবার কীসের প্রটেক্টর? ফ্রি মিক্সিং এর স্বর্গরাজ্যে স্বেচ্ছায় নিজেকে ভাসিয়ে দিলে শুধু স্বামী কেন, বাকি তেরজন মাহরাম সাথে থাকলেও বিপদ এড়ানো যাবে না।

প্রথমত এবং প্রধানত, মেয়েরা ঘরের ভেতর থাকবে এটাই আল্লাহ্‌র হুকুম। শরীয়তসম্মত জরুরতে যখন বেরোবে তখন আপাদপমস্তক আবৃত থাকবে, নো সাজসজ্জা, নো পারফিউম; আর দূরত্ব বেশি হলে মাহরাম সাথে থাকা মাস্ট। এই অবধি বলার পর শয়তান আরেক যুক্তি এনে হাজির করবে-“অথচ মেয়েরা নিজের ঘরেও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, তবে ঘরে থেকে লাভটা কী?”

 আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে অন্তরের ধুলো সরান। মেয়েরা ঘরেও হ্যারসড হয় বটে। কাদের দ্বারা হয়? খালাতো-মামাতো-চাচাতো ভাই, দুঃসম্পর্কের চাচা-মামা ইত্যাদি দ্বারা। ইসলাম কিন্তু এও বলে দিয়েছে মেয়ের ঘরে এরা অ্যালাউড না, এরা গায়েরে মাহরাম, এদের সামনে দেখা দেওয়া যাবে না। অথচ কী অবলিলায় একঘরে তাদের রেখে বাপ-ভাই রা বেরিয়ে যায় বাসা থেকে, আর দুর্ঘটনা ঘটলে দোষ নাকি মোল্লাদের। এদের মস্তিষ্কে কী পরিমাণ আচ্ছাদন পড়েছে!

তের

আজকে আমাদের প্র্যাকটিসিং মুসলিম ফ্যামিলিগুলোতে সবচেয়ে অবহেলিত বিষয় হল আত্মীয়স্বজনের মধ্যকার গায়রে মাহরামদের সাথে পর্দা না করা। বিশেষ করে আত্মীয় স্বজনের মধ্যকার মাহরাম আর গায়রে মাহরাম কারা এই বোধটুকু পর্যন্ত অনেকের নেই।

*মাহরাম= যাদের সাথে বিয়ে হারাম।
*গায়রে মাহরাম= যাদের সাথে বিয়ে জায়েজ।

জরুরী কাজে ঘরের বাহিরে গেলে যে পর্দা করতে হয় তা যিনি পর্দা করেন না তিনিও জানেন। অথচ বুরকা পড়েন, নিক্বাবও করেন এমন অনেক মা বোনদের খুঁজলে পাওয়া যাবে উনারা মাহরাম কী, গায়রে মাহরাম কী তা জানেন না। শুধুমাত্র বাহিরে গেলে “পর্দা করতে হবে” এই ধারণা নিয়ে পড়ে আছেন।

আমরা পুরুষরাও এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ বেখেয়াল।
অথচ একজন পুরুষের জন্য যেমন ঘরের বাহিরের পরনারীকে দেখা হারাম, ঠিক তেমনি নিজের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যকার গায়রে মাহরামদের দেখাও হারাম। যেমনঃ চাচি, মামি, ভাবি, শালি, মেয়ে কাজিন ইত্যাদি। একজন নারীর জন্যও পর্দার একই হুকুম। যেমনঃ খালু, ফুফা, দুলাভাই, ভাসুর, দেবর, চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, ফুফা শ্বশুর, ছেলে কাজিন ইত্যাদি।

অনুরূপভাবে একজন নারীর জন্য যেমন বাইরের পুরুষদের দৃষ্টি থেকে নিজেকে ঢেকে রাখা ফরজ, আত্মীয়দের মধ্যকার নন মাহরামদের সামনে দেখা দেয়াও তাদের জন্য হারাম।

অথচ একজন পুরুষ তার চাচাত,মামাত,ফুফাতো বোনদের সাথে বসে আড্ডা দেয়, ৩২ দাঁত বের করে হাসাহাসি করে, মামি, চাচিদের মায়ের মতো মনে করে, ভাবির সাথে গল্পগুজব করে। অথচ তাদের সাথে পর্দা আর বাইরের একজন নারীর সাথে পর্দার হুকুম একই।

একজন নারী দেবরকে ভাই মনে করে, জামাইয়ের চাচা,ফুফা,খালু,দুলাভাই অমুখ তমুখের সামনে বসে কথাবার্তা বলে। অথচ তাদের সাথে পর্দা আর বাইরের একজন পুরুষের সাথে পর্দার হুকুম একই।
অনেকে মনে করেন বয়সে আমার চেয়ে ছোট বলে তার সামনে পর্দা করা জরুরী নয়। অথচ এটি সম্পূর্ণ ভুল। একজন নারী বালেগ হলে তার যেমন পর্দা করা ফরজ হয়ে যায় ঠিক তেমনি একজন পুরুষ বালেগ হলে তার সামনে একজন নারীর বয়স চল্লিশ হলেও পর্দা করা ফরজ হয়ে যায়। এটি সম্পূর্ণ খোঁড়া যুক্তি যে একজন ১৪/১৫ বয়সের ছেলের সামনে আবার পর্দা কিসের।

তথাকথিত সামাজিকতার দোহাই দিয়ে ইসলামের হুকুমকে লঙ্ঘন করলে আল্লাহ্‌র বা আল্লাহ্‌র রাসূল(স) এর কিছুই আসবে যাবে না, ক্ষতি যা হওয়ার আমাদেরই হবে, যা বুঝে আসবে হাশরের ময়দানে। তখন বুঝে কোন লাভই হবে না। সময় থাকতেই সংশোধিত হয়ে আল্লাহ্‌র পথে ফিরে আসা দরকার। মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে পর্দার হুকুম যথাযথভাবে মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলামিক শরীয়াহর পরিভাষায় "মাহরাম" বলতে বুঝায় যাদেরকে বিয়ে করা হারাম এবং যাদের সাথে দেখা করা বা দেখা দেওয়া জায়েয। ছেলেদের ও মেয়েদের উভয়ের মাহরাম ব্যক্তিদের সংখ্যা ১৪ জন।
ছেলেদের জন্য ১৪ জন মাহরাম হলেনঃ

মায়ের মতো(৫ জন)-
(১) মা (২) খালা (৩) ফুফু (৪) শাশুড়ী (৫) দুধ-সম্পর্কীয় মা
বোনের মতো (৫ জন)-
(৬) আপন বোন (৭) দাদী (৮) নানী (৯) নাতনী (১০) দুধ-সম্পর্কীয় বোন

মেয়ের মতো (৪ জন)-
(১১) মেয়ে (১২) ভাই এর মেয়ে (১৩) বোনের মেয়ে (১৪) ছেলের বউ

মেয়েদের জন্য ১৪ জন মাহরাম হলেনঃ
বাবার মতো (৫ জন)
(১) বাবা (২) চাচা (৩) মামা (৪) শ্বশুর (৫) দুধ-সম্পর্কীয় বাবা

ভাইয়ের মতো (৫ জন)
(৬) আপন ভাই (৭) দাদা (৮) নানা (৯) নাতী (১০) দুধ-সম্পর্কীয় ভাই

ছেলের মতো (৪ জন)
(১১) ছেলে (১২) ভাই এর ছেলে (১৩) বোনের ছেলে (১৪) মেয়ের জামাই

সুরা আল-বাক্বারাঃ ১৩৩, সুরা আন-নিসাঃ ২৩, সুরা আন-নূরঃ ৩১

মাহরাম আর গায়রে মাহরাম এর প্র্যাক্টিক্যাল সংজ্ঞা এর চেয়ে সহজভাবে বুঝানো সম্ভব নয়। যারা আমল করবে নিজের জন্যই করবে, যারা জেনে বুঝেও আল্লাহর বিধানকে অগ্রাহ্য করবে তাদের আমলের ফায়সালা তাদের মালিকের সাথেই কাল হাশরের ময়দানে হবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে যথাযথ পর্দা করে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

The Superstar Of Hell

অ্যাডাম টিজিং

PHP তে HTML Escape করা